‘কোনো সভ্য মানুষের পক্ষে এ ধরনের আচরণ করা সম্ভব নয়। এটি সম্পূর্ণ স্বাধীনতাবিরোধী ও ইতিহাস-ঐতিহ্যবিরোধী কাজ। বাংলাদেশকে যেন পিছিয়ে দেয়া যায়, এটি সে ধরনের স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের কাজ।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের তাণ্ডবের প্রায় পাঁচ সপ্তাহের বেশি সময় পর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো পরিদর্শন শেষে এ কথা বলেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) হাবিবুর রহমান।
ডিআইজি শনিবার বেলা ১১টার দিকে বলেন, ‘যারা এ ঘটনার পেছনে ইন্ধনদাতা, যারা পরিকল্পনাকারী, তারা ঘটনাস্থলে থাক বা না থাক, অবশ্যই আইনের আওতায় আসবে। কিছু প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তারা আইনের আওতায় আসবে।’
গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতে ইসলামের কর্মী-সমর্থকদের সহিংসতার ঘটনায় ৫৬টি মামলা হয়েছে যার মধ্যে নয়টি তদন্ত করছে সিআইডি।
ডিআইজি বলেন, ‘জেলা পুলিশ, সিআইডি ও পিবিআই সম্মিলিতভাবে মামলাগুলোর তদন্ত করছে। আমরা সবাই সমন্বয়ের মাধ্যমে তদন্ত করছি। ইতোমধ্যে মামলাগুলো তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে দেয়া হয়েছে। তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
‘কারা কারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল, আমরা সেগুলো পর্যালোচনা করছি। ভিডিও ফুটেজ থেকে আসামিদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। অনেককে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কোনো মামলাই ঝুলে থাকবে না, যত দ্রুত সম্ভব নিষ্পত্তির দিকে যাবে।’
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে গত ২৬ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কান্দিপাড়া এলাকার জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসা থেকে কয়েক হাজার ছাত্রের মিছিল বের হয়। তারা শহরের কেন্দ্রস্থল বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর করে আগুন দেয়। পাশাপাশি তারা আগুন দেয় শহরের রেলস্টেশন, আনসার ক্যাম্প, মৎস্য অধিদপ্তরে।
হামলা হয় পুলিশ সুপারের কার্যালয়েও। এ সময় পুলিশ গুলি চালালে এক ব্যক্তি নিহত হন।
পরদিন মহাসড়ক অবরোধ করলে পুলিশের সঙ্গে মাদ্রাসাছাত্রদের সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান পাঁচজন।
নিহত ব্যক্তিদের নিজেদের কর্মী দাবি করে প্রতিবাদে ২৮ মার্চ হরতাল ডাকে হেফাজত। হরতালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চলে ব্যাপক তাণ্ডব। বঙ্গবন্ধুর দুটি ম্যুরাল ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত সবগুলো স্থাপনায় ভাঙচুরের পাশাপাশি ধরিয়ে দেয়া হয় আগুন।
হামলা চলে পৌরসভা কার্যালয়, সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি কার্যালয়, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কার্যালয়, শহিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বর, গণগ্রন্থাগার, সংগীতজ্ঞ আলাউদ্দিন খাঁর স্মৃতিবিজড়িত ‘সুরসম্রাট দি আলাউদ্দিন সংগীতাঙ্গন’, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়, বীর মুক্তিযোদ্ধা আল মামুন সরকারের অফিস, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বাড়ি এবং সরাইলের খাটিহাতা হাইওয়ে থানায়।
এসব ঘটনায় হওয়া মামলায় এ পর্যন্ত ৩৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।